কেন নীলষষ্ঠীর ব্রত পালন করা হয়? (Why Nil Shasthi Vrat is observed?)

Folklore and significance of Nil Shasthi Vrat observed for the well-being of children.

নিউজ অফবিট ডিজিটাল ডেস্কঃ
বাংলার লোকসংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হল নীলষষ্ঠীর ব্রত। চৈত্র মাসের শেষ লগ্নে, চৈত্র সংক্রান্তির ঠিক আগের দিন এই বিশেষ তিথিতে সন্তানের মঙ্গল কামনায় মায়েরা উপবাস রাখেন এবং নিষ্ঠার সঙ্গে শিব ও দেবী ষষ্ঠীর পূজা করেন। কিন্তু কেন এই ব্রত পালন করা হয়? এর পেছনের বিশ্বাস ও লোককথাগুলি কী? আসুন, সেই রহস্যের গভীরে প্রবেশ করা যাক।

এই ব্রতের উৎপত্তির সঙ্গে জড়িয়ে আছে বেশ কয়েকটি লোককথা ও বিশ্বাস। তাদের মধ্যে দুটি প্রধান কাহিনী বিশেষভাবে প্রচলিত:

শিব ও নীলাবতীর বিবাহ:

অনেকের বিশ্বাস, নীলষষ্ঠী হল দেবাদিদেব মহাদেব নীলকণ্ঠ এবং দেবী নীলচণ্ডিকা বা নীলাবতীর বিবাহ বার্ষিকীর উদযাপন। প্রচলিত পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, দক্ষযজ্ঞে সতী দেবীর দেহত্যাগের পর তিনি পুনরায় নীলধ্বজ রাজার বিল্ববনে আবির্ভূত হন। রাজা তাঁকে নিজের কন্যার মতো লালন-পালন করেন এবং পরবর্তীতে শিবের সঙ্গে তাঁর বিবাহ দেন। তবে, বাসর রাতেই দেবী মক্ষিকারূপ ধারণ করে মৃত্যুবরণ করেন। এই মর্মান্তিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করে শোকে মুহ্যমান রাজা ও রানীও প্রাণত্যাগ করেন। তাই, এই দিনটিকে শিব ও নীলাবতীর পবিত্র বিবাহের স্মৃতি রূপে পালন করা হয়, যা 'নীল পুজো' নামে পরিচিত।


বামুন-বামনীর সন্তান রক্ষার কাহিনী:

নীলষষ্ঠীর ব্রত মাহাত্ম্য নিয়ে আরও একটি জনপ্রিয় লোককথা প্রচলিত আছে। বহুকাল আগে এক গ্রামে এক ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণী বাস করতেন। তাঁরা ধার্মিক ছিলেন এবং নানা ব্রত পালন করতেন, কিন্তু তাঁদের কোনো সন্তানই দীর্ঘজীবী হত না। এই গভীর দুঃখে একদিন তাঁরা কাশীর গঙ্গা ঘাটে বসে কাঁদছিলেন। তাঁদের কাতরতা দেখে দেবী ষষ্ঠী এক বৃদ্ধা বামনীর রূপ ধরে তাঁদের কাছে এসে কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করেন।

ব্রাহ্মণী তাঁর কষ্টের কথা খুলে বললে, দেবী ষষ্ঠী জানতে চান, "তোমরা কি নীলষষ্ঠীর ব্রত করেছ?" ব্রাহ্মণী উত্তরে জানান যে তাঁরা এই ব্রতের বিষয়ে কিছুই জানেন না। তখন দেবী ষষ্ঠী (বুড়ি বামনীর বেশে) তাঁদের নীলষষ্ঠীর ব্রতের নিয়মাবলী জানান। তিনি বলেন, "সমস্ত চৈত্র মাস সংযম পালন করে শিবের পূজা করবে, এবং সংক্রান্তির আগের দিন পূর্ণ উপবাস করে সন্ধ্যায় দেবী নীলাবতীর পূজা করবে। এরপর নীলকণ্ঠ শিবের মন্দিরে প্রদীপ জ্বালাবে এবং মা ষষ্ঠীকে প্রণাম করে তবে জল গ্রহণ করবে। এই দিনটি ষষ্ঠীর দিন হিসেবে গণ্য হয়। যারা নিষ্ঠার সঙ্গে নীলষষ্ঠীর ব্রত পালন করে, তাদের সন্তান কখনও অকালে মারা যায় না।"

এই কথা বলার পরই দেবী ষষ্ঠী অন্তর্হিত হন। এরপর ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণী ভক্তি ভরে নীলষষ্ঠীর ব্রত পালন করেন। সেই থেকে তাঁদের সকল সন্তান সুস্থ ও দীর্ঘজীবী হয়। এই ঘটনার পর থেকেই নীলষষ্ঠীর পূজা প্রচলিত হয় বলে বিশ্বাস করা হয়।

Image of a mother worshipping Shiva and Goddess Sasthi with the origin stories of Nil Shasthi Vrat.

এই দুটি প্রধান লোককথার পাশাপাশি, নীলষষ্ঠীর ব্রত মূলত সন্তানের সুস্থতা, মঙ্গল ও দীর্ঘায়ু কামনার একটি শক্তিশালী প্রতীক। এই পুজোয় মূলত মা ষষ্ঠী, নীলাবতী দেবী ও শিবের আরাধনা করা হয়। যারা এই ব্রত রাখেন, তারা চৈত্র মাস জুড়ে নিরামিষ আহার করেন এবং ব্রতের দিন (চৈত্র সংক্রান্তির আগের ষষ্ঠী তিথি) উপবাস থেকে সন্ধ্যায় বিশেষভাবে পুজো করেন। বাতি জ্বালানো, শিবের ঘরে প্রদীপ রাখা এবং ষষ্ঠীদেবীকে প্রণাম করে জল গ্রহণের মধ্যে দিয়ে সম্পন্ন হয় ব্রত। বিশ্বাস করা হয়, এই পুজোর মাধ্যমে সন্তানসন্ততির দীর্ঘায়ু ও মঙ্গল নিশ্চিত হয়। এটি কেবল একটি লৌকিক আচার নয়, বরং গভীর বিশ্বাস ও ভালোবাসার এক মেলবন্ধন, যেখানে সন্তানের প্রতি মায়ের নিঃস্বার্থ প্রার্থনা ধ্বনিত হয়।

আজও বাংলার ঘরে ঘরে এই প্রাচীন ঐতিহ্য অমলিন রয়েছে। নীলষষ্ঠীর ব্রত পালন করে মায়েরা তাঁদের সন্তানদের প্রতি অসীম স্নেহ ও উদ্বেগের প্রকাশ ঘটান এবং তাঁদের সুস্থ ও সুন্দর জীবনের কামনা করেন। এই ব্রত একদিকে যেমন আমাদের লোকসংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি, তেমনই অন্যদিকে পারিবারিক বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করে তোলে।


#NilSasthiPuja, #NilSasthi, #BengaliFestival, #Puja, #HinduFestival, #MotherAndChild, #Wellbeing, #Prayers, #Tradition, #Culture, #India, #April2025, #Chaitra, #Hinduism, #Spirituality

0/Post a Comment/Comments

নবীনতর পূর্বতন