রঙচটা প্রাচীরের দেওয়াল ঘেঁষে টুপ করে সন্ধ্যা নামে। হামাগুড়ি দিয়ে অন্ধকার ঢোকে আমাদের বেডরুমে। যৌনতায় মিশে থাকে জীবনের টানাপোড়েন। ক্লাসিফাইড বিজ্ঞাপনে ভরসা খুঁজতে থাকে মধ্যবিত্ত মন। চৌকাঠের চিহ্ন রেখে যায় বদলে যাওয়া সময়, আর না বদলানো কিছু মানসিকতা দরজায় খিল দিয়ে দিনবদলের স্বপ্ন দেখে। আজকের কথকতায় জমে থাক 'জীবনের ঘূর্ণিপাক'। লিখছেন প্রাণকৃষ্ণ ঘোষ।
কার যে কোথায় মুক্তি অন্যদের পক্ষে তা বোঝা সম্ভব নয়। পরিস্থিতি অনুযায়ী এই ব্যাপারটা নির্ভর করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতির বদল ঘটলে, পাল্টে যায় মুক্তির ভাবনা। পড়াশোনা, চাকরির প্রস্তুতির থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ভালো চাকরি করা যুবকের সঙ্গে বিবাহে আবদ্ধ হলেন যে যুবতি; বিয়ের মাস ছয়েক পরেই তাঁর মনে হলো এই মুক্তি সে চায়নি। মাত্র মাস ছয়েকের ব্যবধানে তাঁর মুক্তির ভাবনা পাল্টে গেল। এই মুহূর্তে তাঁর মুক্তি ডিভোর্সে। স্বনির্ভর হওয়াতেই তাঁর মুক্তি।
আমার অ্যাক্সিডেন্টের আগে যখন চূড়ান্ত ব্যস্ততা চলছে তখন মনে হতো কয়েকদিন সমস্ত কাজ থেকে ছুটি পেলেই আমার মুক্তি। আবার বেড রেস্টে থাকার সময় মনে হলো এই দশফুট বাই দশফুট দেওয়ালের বাইরেই আসলে মুক্তি। কবে যে ঘরের বাইরে যেতে পারবো!
মুক্তি আসলে একটা অনুভব; যা মানুষকে একটা ভালোলাগার জায়গায় পৌঁছে দেয়। নিজেকে ভালো রাখার জন্য মনের মতো কাজে যুক্ত হওয়াই বোধহয় মুক্তি। সেইজন্যই তো কেউ মুক্তি পান নরম ঘাসে, কেউ মুক্তি পান গ্লসি মার্বেলে। কারও মুক্তি কাজে, কারও মুক্তি আড্ডাতে।
মুক্তিকে উপলব্ধি করার জন্য যেমন সবচাইতে বেশি দরকার বন্ধনকে উপলব্ধি করা তেমনই নিজের পছন্দের কাজে যুক্ত হতে পারলেই আসলে পাওয়া যেতে পারে মুক্তির আস্বাদ - এমনটাই সাধারণত ধরে নেওয়া যায়।
কেউ নেশা করে মুক্তির আনন্দ লাভ করে আবার কেউ মুক্তি পেয়েছে ভেবে নেশা করে। যাইহোক, মুক্তি একপ্রকার মানসিক অবস্থান মাত্র ; যে মানসিক অবস্থানে মানুষ বিশ্বাস করে সে ভালো আছে। যখনই বিশ্বাসের বদল হয় তখনই পাল্টে যায় মুক্তির ধারণাও। মুক্তি পাওয়া না পাওয়ার ব্যাপারটা অনেক সময়েই যুক্ত থাকে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর যা নিশ্চিতভাবেই সময় ও পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে বদলে যায়। সেই জন্যই সময়ের সঙ্গে মুক্তির ভাবনাতেও পরিবর্তন আসে।