লকডাউনে রাত জেগে ওয়েব সিরিজ? ফল হচ্ছে মারাত্মক

Night-time Phone Use Destroys Your Sleep

স্নেহা মাইতিঃ করোনাকালে গতি পেয়েছে ডিজিটাল মাধ্যম। ছুঁতে মানা, ধরতেও। অর্থাৎ সবই ভার্চুয়াল। ফলে স্কুল, কলেজ, কেনাকাটি, গল্প, আড্ডা, খেলা সবকিছুই অনলাইনে। ডিজিটাল দুনিয়ায় সবার কাছেই আছে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ এবং কম্পিউটার। আর এই ডিজিটাল ডিভাইস- এর বাড়বাড়ন্ত কেড়ে নিচ্ছে আমাদের নিয়মিত ঘুমের অভ্যাস। যার ফল হচ্ছে মারাত্মক। 

রবিবার সকালে মর্নিং ওয়াকে গিয়েছিলাম। বাড়ির কাছে সাউথ সিঁথি বিশ্বনাথ পার্কে। দেখা হলো এক পরিচিতার সঙ্গে। নীল সেন, কলেজে পরে। কথায় কথায় জানতে পারলাম সারাদিন পড়াশোনা করেন এবং প্রায়ই রাতে নতুন নতুন ওয়েব সিরিজ দেখেন। অর্থাৎ তিনি পর্যাপ্ত ঘুমাচ্ছেন না। নীল সেন একা নন। এরকম অনেকেই রয়েছেন। দিনে বাড়ি বসে অফিসের কাজ অথবা অনলাইন ক্লাস। আর এই একঘেয়েমি জীবন থেকেই মুক্তি পেতে রাতে শুতে যাওয়ার আগে ওটিটি প্লাটফর্মে ঢুঁ মারা। ভাবেন একটা এপিসোড দেখেই ঘুমিয়ে যাবেন। কিন্তু দেখতে শুরু করলে আর থামার উপায় থাকে না। একটা, আর একটা তারপর আরও একটা। এভাবে রাত বেড়ে চলে। উত্তেজনাও। চমকপ্রদ ও ঘটনাবহুল কাহিনি থামতে দেয় না। থামানো যায় না। এতো গেলে একদিক। দোসর সোশ্যাল সাইটগুলিও। ফিডে চোখ বোলাতে বোলাতেই টুং করে ম্যাসেজ। ব্যাস, এককথা... দুকথা, এভাবে কথায় কথায় যে রাত হয়ে যায়। ফল ঘুমের দফারফা। 

গবেষণায় দেখা গিয়েছে, রাতে ঘুম কম হওয়ার কারণে দেহের ওপর যে প্রভাব পড়ছে তা মারাত্মক ক্ষতিকর। ঠিক মত ঘুম না হলে মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন,  রাতের বেলায় না ঘুমিয়ে মোবাইলে সিনেমা দেখা বা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করলে শরীরের অনেক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। বিশেষভাবে ক্ষতি হয়ে চোখের ওপর। চোখে ঝাপসা দেখা, কিছু দিন পর পর মাথা ব্যথা, ইত্যাদির সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। 

শোভাবাজারের শেঠ আনন্দরাম জয়পুরিয়া কলেজের অধ্যাপিকা মনরোগ বিশেষজ্ঞ প্রাইতি চক্রবর্তী জানান, ঘুমের অভাব মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এটি প্রধানত ব্যক্তির জ্ঞানীয় কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে। রাতে ঠিক মত না ঘুম হলে মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়। যেহেতু আমাদের স্নায়ুতন্ত্র অনিদ্রায় বিশ্রাম থেকে বঞ্চিত হয়, তাই স্মৃতিশক্তি হ্রাস করে। মনোনিবেশ করতে অসুবিধা হয়। সঙ্গে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। দুর্বল ঘুম নিম্ন মেজাজ, বিষণ্নতা, বিরক্তি, ক্রোধের কারণ। এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সৃজনশীলতাকে নষ্ট করতে পারে।  গুরুতর অনিদ্রায় কেউ হ্যালুসিনেশন এবং ঘুমের পক্ষাঘাত অনুভব করতে পারেন।  

প্রাইতি চক্রবর্তীর কথায়, প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘন্টা ঘুমনো অনেক প্রয়োজন। ঘুম কম হলে হৃদ রোগের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। রাতের পর রাত না ঘুমালে মস্তিষ্কের হরমোনের ক্ষরণ কমতে শুরু করে। ফলে শারীরিক রোগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। রাতে না ঘুমানো অথবা রাতে দেরি করে ঘুমানোর ফলে হাই ব্লাড প্রেসার, বাইপোলার ডিসঅর্ডার, উদ্বেগ ব্যাধি, পিটিএসডি দেখা দেয়। ত্বকের ক্ষতি হয়। সারাদিন ক্লান্তি ভাব থাকে। ওজন বাড়ার সঙ্গে অনেক রোগ যেমন ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরলের মতন মারণ রোগ শরীরে  বাসা বাঁধে। 

তাই যথেষ্ট পরিমানে ঘুম প্রয়োজন। অধ্যাপিকার পরামর্শ, ভালো ঘুমের জন্য বিছানায়ে যাওয়ার আগে এমন কিছু করা প্রয়োজন যা আপনার মানসিক চাপ দূর করে দেবে। যেমন হালকা গরম জলে স্নান, মেডিটেশন বা ধ্যান করা। আপনাদের প্রিয়জন বা কাছের মানুষের সাথে সারাদিনের পর কথা বলা, অথবা ডায়রি লেখা এবং যারা বই পড়তে ভালোবাসেন তাঁরা গল্পের বই পড়তে পারেন। রাতে ঘুমানোর  আগে কফি এড়িয়ে চলুন। ঘরের আলো নিভিয়ে গান শুনলেও আপনার ঘুম ভালো হতে পারে। সমস্যার সমাধান না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। 

0/Post a Comment/Comments

নবীনতর পূর্বতন