আপনার বাড়ির ছোট্ট বাচ্চাটিকে নিয়ে জেরবার? লকডাউনের এই কঠিন পরিস্থিতির সময় তাকে কীভাবে সামলে রাখবেন ভেবে পাচ্ছেন না? অথবা সদ্যোজাত শিশুর স্বাভাবিক সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন কীভাবে? এই সমস্ত বিষয় নিয়ে পরামর্শ দিলেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা: নন্দন রুদ্র।
১) প্রথমেই বলব, ছোট বাচ্চা বা সদ্যোজাত শিশুদের শারীরিক কিছু সমস্যা খুবই স্বাভাবিক। এই অবস্থায় অযথা আতঙ্কিত হবেন না। প্রয়োজনে ফোনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কিন্তু গুরুতর কিছু না হলে চিকিৎসকের কাছে না নিয়ে যাওয়াই শ্রেয়। কারণ চিকিৎসককে বহু রোগীর সংস্পর্শে আসতে হয়। হয়তো তিনি করোনা বা COVID 19 এর বাহক। হয়তো ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মীদের রোগ সংক্রমণ নিরাপদ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি পাওয়ার বেশি হওয়ার কারণে তারা রোগের কবল থেকে মুক্ত থাকেন। কিন্তু একজন শিশুর রোগ সংক্রমণ নিরাপদ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি পাওয়ার কম থাকার কারণে তারা অনায়াসেই রোগ দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। তাই কোন আপৎকালীন অবস্থা বা এমার্জেন্সি না থাকলে শিশুকে বাড়িতে রাখাই ভালো।
২) তবে আপৎকালীন অবস্থায় শিশুকে অবশ্যই নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসতে হবে। যারা গ্রামে থাকেন তারা স্থানীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা স্থানীয় ডাক্তারদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। শিশুদের প্রাথমিক চিকিৎসা যাবতীয় সরঞ্জাম ও সামগ্রী গ্রামীণ স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা স্থানীয় ডাক্তারদের কাছেই মজুদ থাকে। সুতরাং আপৎকালীন পরিস্থিতিতে ভয় না পেয়ে স্থানীয় ডাক্তার বা নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করুন।
৩) অধিকাংশ শিশুদের ও বিশেষত সদ্যোজাত শিশুদের টীকা করণের বা ভ্যাকসিনেশন এর প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত রাখাই ভালো। ভ্যাকসিনেশন বা টীকা নিতে কিছুটা দেরি হলেও কোন অসুবিধা নেই। আর সপরিবারে শিশুকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গেলে সেখানেও একটা জমায়েত তৈরি হয়। একজন শিশুর সঙ্গে যদি দুই থেকে তিনজন অভিভাবক চিকিৎসকের কাছে যান তাহলে ১০ জন শিশুর জন্য ৩০ জন মানুষের জমায়েত হয়। যেটা এই পরিস্থিতিতে কখনোই কাম্য নয়। তাই এখন নিজেকে ও বাচ্চাকে গৃহবন্দী রেখে প্রধান শত্রু করোনার মোকাবিলা করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
৪) চিকিৎসকের বারবার নিষেধ সত্বেও অধিকাংশ বাবা-মা বাচ্চাদের প্রক্রিয়াজাত খাবার (বেবি ফুড) খাওয়াতেই পছন্দ করেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে লকডাউনের ফলে যোগানে ঘাটতি হওয়াই স্বাভাবিক। এই পরিস্থিতিতে যদি বাচ্চা বাড়ির স্বাভাবিক খাওয়া শেখে তাহলে সেটা শিশুর ভবিষ্যতের জন্য মঙ্গল। ৬ মাস পর্যন্ত মাতৃদুগ্ধ একজন বাচ্চার পক্ষে পর্যাপ্ত। ছয় মাসের উপর বাচ্চাদের বাড়িতে তৈরি ডাল, ভাত, শাক সবজি দিয়ে তৈরি খিচুড়ি, সব রকমের ফল এইসবই খাওয়ানো যেতে পারে। এইসব খাওয়ানোই অত্যন্ত নিরাপদ।
৫) যে সমস্ত বাচ্চারা মাতৃদুগ্ধ পান করে তারা সম্পূর্ণ নিরাপদ ভাবেই মাতৃদুগ্ধ পান করতে পারে। তবে মায়ের যদি সর্দি ,কাশি, জ্বর বা শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে অথবা করোনার কোনো লক্ষণ দেখা দেয় তবে বাচ্চার থেকে মাকে দূরত্বে রাখাই শ্রেয়। তবে মাতৃদুগ্ধ সবসময়ই বাচ্চার জন্য নিরাপদ।
(অনুলিখন: তিতাস বিশ্বাস)