ভগবতী দাস: দোলের রঙে রঙিন হলো বাংলার আকাশ। মেতে উঠল জেলা থেকে শহর। শান্তিনিকেতনে সকলে যেমন দোল উৎসবে মত্ত হয়।ঠিক তেমনি কোচবিহারের মোদনমোহন বাড়ির মোদরমোহন ঠাকুরও দোল উৎসবে মত্ত হয় সকলের সাথে। দোল পূর্ণিমার দিন সকাল বেলায় রাধাগোবিন্দকে রঙে রাঙিয়ে দেওয়া হয়। কোচবিহার মোদনমোহন বাড়ির মূল আকর্ষণ। মহারাজা রূপনারায়ন১৬৯৩ খ্রীস্টাব্দে অপূর্ব শ্রীমদনমোহন ঠাকুর স্থাপন করে সেবার ব্যাবস্থা করেছিলেন। মন্দিরে দুটি বিগ্ৰহ ছিল। বিগ্ৰহ দুটিকে বড় মোদনমোহন এবং ছোট মদনমোহন বলা হত। চৌদোলায় মূর্তি থাকলেও সর্বপ্রথম মদনমোহনকেই সকলে দর্শন করতেন। ছোটো মদনমোদন থাকতেই। তিনি রথযাত্রা,রাসযাত্রা, দোলযাত্রা প্রভৃতি বৃন্দাবন লীলায় অংশগ্ৰহন করতেন না।
মদনমোহনবাড়িতে বারমাসে তেরো পার্বণ লেগেই থাকে।দোলযাত্রা, স্নান যাত্রা, রাসযাত্রা, রথযাত্রা, ঝুলনযাত্রা, চন্দনযাত্রা সহ এমন দ্বাদশযাত্রা হয়।এই সময় বিশেষ পূজার ব্যাবস্থা করা হয় মন্দিরে।দোলযাত্রার সময়ে প্রচুর ভক্ত সমাগম হয়।ৎতখন দেবতা সহ সিংহাসন বাইরে বারান্দায় সুসজ্জিত উঁচু মঞ্চে রাখা হয় ভক্ত এবং দর্শনার্থীদের দর্শনের সুবিধার্থে।
মদনমোহন মন্দিরের বসন্ত উৎসবে এক রীতি প্রচলিত আছে। হোলির আগের দিন রাসমেলা মাঠে কয়েকটি ছনের ঘর তৈরি করা হয়।সেখানে মদনমোহন ঠাকুরকে আনা হয়। সেই সঙ্গে বাণেশ্বর শিব এবং তুফানগঞ্জের ষন্ডেশ্বর শিবও এই অনুষ্ঠানে এসে থাকেন। ঘরের মধ্যে একটি পিটুলির তৈরি মানুষের মূর্তি বা ভেরার মূর্তি রেখে বিষ্ণুর পূজা হয়।পূজা অন্তে ঘরগুলিতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।কোনো ঘরের পাশে একটি কাঁচা বাঁশ পুঁতে দেওয়া হয়। আগুন লাগাবার পর বিভিন্ন পাড়ার ছেলেদের মধ্যে বাঁশটি নেবার জন্য জন্য প্রতিযোগিতা আরম্ভ হয়।জয়ী দল গর্বের সঙ্গে বাঁশটি পাড়ার দর্শকদের দেখার জন্য প্রকাশ্য স্থানে বেশ কিছুদিন রেখে দেয়।
লোকবিশ্বাস এই বাঁশ থাকলে সেখানে আগুন লাগবে না।পূর্বে প্রচুর জনসমাগম হত।বর্তমানে নিয়ম রক্ষার অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। এই অনুষ্ঠানকে অনেকে দোল সোয়িরী,বহ্নু উৎসব বা ভেড়া পোড়া বলে থাকেন। এইভাবে পরম্পরায় দোল উৎসব চলে আসছে।
বর্তমানে প্রতিটি মোরে মোরে যেন বসন্ত উৎসব।দোল উৎসবের এক সপ্তাহ আগে থেকে যেন চলে এই বসন্ত উৎসব। প্রতিটি স্কুল কলেজ আনন্দের সাথে পালন করে এই বসন্ত উৎসব। কোচবিহার রাজবাড়ি স্টেডিয়ামে সকলে মিলিত হয়ে এই বসন্ত উৎসব পালন করে নাচ গান আবৃত্তি আবির খেলার মধ্য দিয়ে।এই বসন্ত উৎসবই যেন সকলের মিলন স্থল।আর তার মাঝে ফটোসুট, সেলফি, টিকটকতো আছেই।
গ্ৰাম বাংলায় এই বসন্ত উৎসবের আর এক অন্য রূপ। এক অন্য বসন্ত উৎসব দেখা যায়। ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরা রাধা কৃষ্ণ আর রাধার সখী সেজে প্রতি বাড়ি গিয়ে সকলে রঙ মাখিয়ে গান করে নাচ করে কিছু উপহার নিয়ে আসে।তারপর সকলে সেটা ভাগ করে।