বসন্ত আজও ফ্যাকাশে নয়


রঙচটা প্রাচীরের দেওয়াল ঘেঁষে টুপ করে সন্ধ্যা নামে। হামাগুড়ি দিয়ে অন্ধকার ঢোকে আমাদের বেডরুমে। যৌনতায় মিশে থাকে জীবনের টানাপোড়েন। ক্লাসিফাইড বিজ্ঞাপনে ভরসা খুঁজতে থাকে মধ্যবিত্ত মন।  চৌকাঠের চিহ্ন রেখে যায় বদলে যাওয়া সময়, আর না বদলানো কিছু মানসিকতা দরজায় খিল দিয়ে দিনবদলের স্বপ্ন দেখে। আজকের কথকতায় জমে থাক 'জীবনের ঘূর্ণিপাক'। লিখছেন প্রাণকৃষ্ণ ঘোষ। 
প্রিয় মানুষ চলে গেলে বসন্ত কি হারিয়ে যায়? ফিকে হয়ে যায় পলাশের রঙ? আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামে? – এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা না থাকলেও জীবন এটুকু জানিয়ে দিয়েছে যে প্রিয় মানুষ চিরতরে হারিয়ে গেলে দীর্ঘস্থায়ী মনখারাপ হয়। শরীর এবং মন গ্রাস করে নাম না জানা অবসাদ। ঠাকুমা চলে গেলেন । শেষ হয়ে গেল একটা গোটা প্রজন্ম। ঐ প্রজন্মের শেষ মানুষ হিসেবে ছিলেন ছাতার মতো। চলে গেলেন। আই সি ইউ থেকে ভেন্টিলেশন নির্বিকার থেকে জিতে গেলেন জীবন। শিখিয়ে গেলেন কষ্ট ভুলে কীভাবে জীবনকে সহজে নেওয়া যায়। দূরে একটা বিরাট পলাশ গাছ থেকে টুপ করে একটা পলাশ খসে পড়লো। খসে পড়া পলাশটাও হয়তো আরো কিছুদিন বা কিছুক্ষণ গাছেই থাকতে চেয়েছিল। হয়তো পলাশটার সময় হয়ে এসেছিল। পলাশটাতো হারিয়ে যায়নি, টুপ করে খসে পড়ার আগে রেখে গেছে হাজারও অনুভূতির গল্প। আসন্ন দোল সেই অনুভূতিতেই জাগরুক হবে। বাহ্যিক দোল না থাকলেও ভিতরে ভিতরে রঙিন হয়ে উঠবে। যে মানুষ চলে যায়, সত্যিই কি চলে যায়? যাঁর পায়ে আবির ছোঁয়ালেই দোল শুরু হয়ে যেত সেই পা দুটো তো চোখের সামনেই। দোল তো হৃদয়ে বসন্তের হিল্লোল বার্তা হয়ে আসে। বাহ্যিক অনুভূতি পেরিয়ে দোল তো আসলে অস্থিতে, মজ্জায় শুভ সূচনার কথা বলে। প্রকৃতির ফ্যাকাশে ভাব কাটিয়ে দোল ঝলমলে দিন নিয়ে আসুক। অকালবর্ষণ পেরিয়ে সুস্থ সংস্কৃতির বিচ্ছুরণ হোক। কর্ম রঙিন হোক। মর্ম রঙিন হোক।

0/Post a Comment/Comments

নবীনতর পূর্বতন