রঙচটা প্রাচীরের দেওয়াল ঘেঁষে টুপ করে সন্ধ্যা নামে। হামাগুড়ি দিয়ে অন্ধকার ঢোকে আমাদের বেডরুমে। যৌনতায় মিশে থাকে জীবনের টানাপোড়েন। ক্লাসিফাইড বিজ্ঞাপনে ভরসা খুঁজতে থাকে মধ্যবিত্ত মন। চৌকাঠের চিহ্ন রেখে যায় বদলে যাওয়া সময়, আর না বদলানো কিছু মানসিকতা দরজায় খিল দিয়ে দিনবদলের স্বপ্ন দেখে। আজকের কথকতায় জমে থাক 'জীবনের ঘূর্ণিপাক'। লিখছেন প্রাণকৃষ্ণ ঘোষ।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা – শহিদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হলেও সেই সমস্ত মহান ভাষা ও অক্ষর কর্মীদের সম্মান জানানোর জন্য সারাজীবনই উৎসর্গের প্রয়োজন রয়েছে। মাতৃভাষা তো আসলে মাতৃদুগ্ধ। হাজার সুস্বাদু বেবিফুডও যেমন শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য মাতৃদুগ্ধের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে না, তেমনি একাধিক ভাষা শেখার চেষ্টা করলেও সম্যকভাবে ভাব প্রকাশের জন্য মাতৃভাষার বিকল্প খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। বাংলা ভাষা বাঙালির নাড়ির টান। মাতৃগর্ভে থাকার সময়েই শিশুর নাড়ির সঙ্গে মিশে যাওয়া বাংলা ভাষাকে তাই বাঙালির মনন থেকে মুছে ফেলা অসম্ভব। প্রত্যেক বাঙালির বুকের ভিতরে বাংলা সদা বিরাজমান। বিরাজমান বলেই কড়া ইংরেজি মাধ্যমের সপ্রতিভ ছাত্রও স্কুল – ক্যাম্পাস টপকেই বাংলায় ফিরে আসতে পেরে হাঁপ ছেড়ে বাঁচে, ইংরেজি সাহিত্যের দুঁদে অধ্যাপকও লেকচার সেশন শেষ করে স্টাফরুমে ফিরতে চান বাংলায় ফিরবেন বলে, আমেরিকায় বসে নোবেল লরিয়েট বাংলায় বিবৃতি দেন ওয়ার্ল্ড মিডিয়ার সামনে। বাংলা আসলে বাঙালিদের মননে। মননে বাংলা বলেই ইংরেজি মাধ্যমের ছাত্র ভাগ্না বাংলায় ক্রিকেট কমেন্ট্রি শোনার ইচ্ছা প্রকাশ করে, ভাগ্নিরা খেলার বিষয় হিসেবে বাংলা সিরিয়ালের গল্প ভাঁজে, ভাইপো একপা দুপা হাঁটতে হাঁটতে আধো আধো বুলিতে মা আর বাবাই বলতে শেখে সবার আগে, ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র হয়েও আমি সৃজনশীল লেখাগুলো বাংলায় ছাড়া লেখার কথা ভাবতেই পারি না, ঠাকুমা আই সি ইউ তে যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে বাংলাতেই চিৎকার করেন, স্বপ্ন বাংলাতেই দেখি, দুঃখ – আনন্দ বাংলাতেই বুঝি, পেটে কিল মারলে ও মা গো এর বাইরে কিছু বের হয় না মুখ দিয়ে।
বেঁচে থাক বাংলা। আমাদের মাতৃভাষা। আমাদের রাগ প্রকাশের ভাষা, আমাদের আনন্দ প্রকাশের ভাষা। জয় হোক। শুভ হোক।