রঙচটা প্রাচীরের দেওয়াল ঘেঁষে টুপ করে সন্ধ্যা নামে। হামাগুড়ি দিয়ে অন্ধকার ঢোকে আমাদের বেডরুমে। যৌনতায় মিশে থাকে জীবনের টানাপোড়েন। ক্লাসিফাইড বিজ্ঞাপনে ভরসা খুঁজতে থাকে মধ্যবিত্ত মন। চৌকাঠের চিহ্ন রেখে যায় বদলে যাওয়া সময়, আর না বদলানো কিছু মানসিকতা দরজায় খিল দিয়ে দিনবদলের স্বপ্ন দেখে। সন্ধ্যার এই আবছা আলো আঁধারিতে জমে থাক 'জীবনের ঘূর্ণিপাক'। লিখছেন প্রাণকৃষ্ণ ঘোষ।
ইংলিশ মিডিয়ামের সৌজন্যেই হোক বা যুগের সঙ্গে তাল মেলানোর সৌজন্যে, এখন যুগটা আদপে কর্পোরেট প্যাকেজিং এর। সেই কর্পোরেট প্যাকেজিং এর এক অন্যতম সংস্করণ ভ্যালেন্টাইন ডে। হ্যাঁ ভালোবাসার দিন। আপনি বলবেন ভালোবাসা কি আর দিন দেখে হয় নাকি! আপনি ব্যাকডেটেড মশাই। ভালোবাসতে হবে দিনক্ষণ মেনেই। আপনাকে আলিঙ্গন করতে হবে, চকোলেট দিতে ও খেতে হবে, গোলাপ দিতে আর অবশ্যই চুমু খেতে হবে। ভ্যালেন্টাইন ডে’র সঙ্গে কোনও স্মৃতি, ইতিহাস ইত্যাদি কিছু জড়িয়ে ছিল কিনা ভুলে যান মশাই। মেতে উঠুন কর্পোরেট প্যাকেজিং এ। নাহলেই আপনি পিছিয়ে পড়বেন। কী দরকার। যুগটা কম্পিটিশন-এর এটা বুঝুন মশাই। আপনার সাতবারের চেষ্টায় রাজি হওয়া কর্পোরেট এমপ্লয়ী প্রেমিকা হোক বা আপনার বাড়ি থেকে পঞ্চমবারের চেষ্টায় পছন্দ করা পলিটিক্যাল সায়েন্স এর দিদিমণি কেউই আর সেফ নয় মশাই। জিও পরবর্তী যুগে সবার হাতেই অনেক অপশন। সবার রিজার্ভ বেঞ্চই স্ট্রং। তার চেয়ে বরং চরম অনিচ্ছা সত্বেও পরম আনন্দে পাঁচ টাকার গোলাপ পঁচিশ টাকায় কিনে নিন। তাপ্পর আপনার তার পছন্দসই গোটাকয়েক চকোলেট কিনে নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরুন। এরপর সময় বুঝে তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে একটা আলতো করে… চকোলেট আর গোলাপটা দিয়ে দিন। ব্যস আগামী ভ্যালেন্টাইন ডে পর্যন্ত আপনাদের প্রেমটা টিকে গেল। যদি পরের দিন একবার জাঙ্ক জুয়েলারির আউটলেটে গিয়ে একটা এক্সক্লুসিভ কিছু উপহার দিতে পারেন, তাহলে আপনি আগামী একবছর বেশ খানিকটা নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত থাকবেন। ভালো থেকো কর্পোরেট কালচার, ভালো থেকো প্রেম, ভালো থেকো ভ্যালেন্টাইন ।