ধুলোমাখা বই ও অনুভূতির গল্প

রঙচটা প্রাচীরের দেওয়াল ঘেঁষে টুপ করে সন্ধ্যা নামে। হামাগুড়ি দিয়ে অন্ধকার ঢোকে আমাদের বেডরুমে। যৌনতায় মিশে থাকে জীবনের টানাপোড়েন। ক্লাসিফাইড বিজ্ঞাপনে ভরসা খুঁজতে থাকে মধ্যবিত্ত মন।  চৌকাঠের চিহ্ন রেখে যায় বদলে যাওয়া সময়, আর না বদলানো কিছু মানসিকতা দরজায় খিল দিয়ে দিনবদলের স্বপ্ন দেখে। সন্ধ্যার এই আবছা আলো আঁধারিতে জমে থাক 'জীবনের ঘূর্ণিপাক'। লিখছেন প্রাণকৃষ্ণ ঘোষ
শীতকাল আসে, শীতকাল যায়। অপর্ণা, বিমলা , সুদীপ্তা, সুপর্না’দের আবেগ দূরে সরিয়ে রেখে ফিরে ফিরে আসতে হয় বাস্তবতায়। ফেডেড জিন্স, হালকা দাড়ি আর ট্রেন্ডি পুলওভারে শোভিত ছিপছিপে তরুণের আসল উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায় বই যাপন। বই যাপন মানেই তো বইমেলা। আর বইমেলার মাঠজুড়ে আন্তর্জাতিক আবহ থাকলে নিঃসন্দেহে একটা আলাদা মাত্রা যোগ হয়ে যায়। এখানেই আন্তর্জাতিক কোলকাতা বইমেলা হয়ে ওঠে অনন্য। করুণাময়ী বাসস্ট্যান্ড থেকে সোজা আট বা নয় নম্বর গেট দিয়ে ঢুকে পড়া যায় বইমেলার অন্দরে। বড়, ছোট প্যাভিলিয়ন থেকে অডিটোরিয়াম সবকিছুই পাওয়া যাবে বইমেলায়। অডিটোরিয়ামে বিবিধ সেমিনার হোক বা লিটল ম্যাগাজিন প্যাভিলিয়নে আলাপ আলোচনা, বড় প্রকাশনের স্টলে গিয়ে নামী লেখক, কবিদের সঙ্গে দেখা করা হোক বা ছোট প্রকাশনের স্টলে গিয়ে ভাবের বিনিময় – দাওয়াই সেই একটাই, কোলকাতা বইমেলা। বন্ধুদের সঙ্গে নিখাদ আড্ডা মারা, প্রেমিকের চোখে চোখ রেখে পছন্দের বই কেনা, সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর সঙ্গে ধুলোমাখা ঘাসে বসে পরবর্তী বইমেলায় ক্রয়যোগ্য বই এর তালিকা করা, সামাজিক বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ করা, হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে গিয়ে গরম কফির খোঁজ করা, বউ এর আব্দার রাখতে দই ঢাকাই খেতে গিয়ে কুড়ি বছর আগের বন্ধুকে হঠাৎ চোখের নাগালে পেয়ে যাওয়া – এই সমস্ত সম্ভাবনাগুলোকে একত্রিত করলেই একটা মায়াবী কোলকাতা বইমেলার চিত্র উঠে আসা প্রায় নিশ্চিত। থিম কান্ট্রি রাশিয়া হোক বা ফ্রান্স, ঢুকে পড়ুন মশাই। থরে থরে সাজানো বইগুলো আপনার ছোঁয়া পাওয়ার অপেক্ষায় আছে। স্রষ্টার রাত জাগার হিসেবটা আপনিই মিটিয়ে দিতে পারেন। প্রকাশকের পরিশ্রমকে কুর্ণিশ জানানোর জন্য আপনাকেই প্রয়োজন। হ্যাঁ, পাঠক আপনাকেই।

0/Post a Comment/Comments

নবীনতর পূর্বতন