বিদ্যা দে মা, খানিক প্রেমও

রঙচটা প্রাচীরের দেওয়াল ঘেঁষে টুপ করে সন্ধ্যা নামে। হামাগুড়ি দিয়ে অন্ধকার ঢোকে আমাদের বেডরুমে। যৌনতায় মিশে থাকে জীবনের টানাপোড়েন। ক্লাসিফাইড বিজ্ঞাপনে ভরসা খুঁজতে থাকে মধ্যবিত্ত মন।  চৌকাঠের চিহ্ন রেখে যায় বদলে যাওয়া সময়, আর না বদলানো কিছু মানসিকতা দরজায় খিল দিয়ে দিনবদলের স্বপ্ন দেখে। প্রতি বুধবার সন্ধ্যায় এই আবছা আলো আঁধারিতে জমে থাক 'জীবনের ঘূর্ণিপাক'। লিখছেন প্রাণকৃষ্ণ ঘোষ
Saraswati puja, prem, adda, bangaliyana, valentines day, bangali, festival, puja
বিদ্যা দে মা। একটু আধটু বুদ্ধিও। সেই বুদ্ধিশুদ্ধি নিয়ে যেন খানিক রঙ (অবশ্যই প্রেমের) জমাতে পারি! এবছর মা এমনিতেই উদারহস্ত। মানে মায়ের হাতে বীণা, পুস্তক ছাড়াও অঢেল সময় এবছর। তিথি অনুযায়ী এবছর দু’দিন ধরেই করা যাচ্ছে বাগদেবীর আরাধনা। পুরোহিতদের অবস্থা সঙ্গিন হলেও ছাত্ররা  আজ খুব খুশি। কাল রাতে ফর্দ মেলাতে ভুল হওয়ার দরুণ সশিষ ডাব আনতে ভুলে যাওয়া মেস কমিটির দুঁদে ছাত্র, প্রেমিকাকে সামলেও নিজের মেস সামলাবার সুযোগ পেয়ে যাবে আজ। আজ সারাদিন ধরে পুজো চলবে, প্রয়োজনে কাল সকালেও।  সশিষ ডাব তো আনবেই, সময় করে লেডিজ হোস্টেলে পাঠানোর তত্ত্বের ডালিতে প্রেমিকার পছন্দের চকোলেট ও ঠেসে দেবে ক্ষণ। তাপ্পর নাহয় সাতজনের পরে লাইন পেয়ে হোস্টেলের সর্বজনীন স্নানঘরে লাস্যময়ী  প্রেমিকার মুখের আদল ভাবতে ভাবতে গুছিয়ে শ্যাম্পু করে নেওয়া যাবে। হলুদ পাঞ্জাবি থেকে বেরিয়ে আসা সুতো আর  হলুদ শাড়ির আঁচল যখন নিভৃত খুঁজতে চাইবে তখনই প্রিয়বন্ধু গলা খাঁকাড়ি দিয়ে বেরসিকের মতো মনে করিয়ে দেবে পুষ্পাঞ্জলি নেওয়ার সময় হয়ে গেছে।
গোটাসিদ্ধ আর পঞ্চমী স্পেশাল হরেক কিসিমের রান্নার ফাঁকেও মাঝবয়সী গৃহবধূ হঠাৎ নস্টালজিক হয়ে পড়বেন। বছর বারো আগে এই দিনেই যে অধুনা বরের কাছ থেকে প্রস্তাবটা পেয়েছিলেন! সাত বছরের কন্যা আজ হলুদ শাড়িতে সেজেছে। আর মাত্র বছর বারো পর তারও প্রস্তাব পাওয়ার বা দেওয়ার সময় হবে। কর্পোরেট কালচার এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে যতই ভ্যালেন্টাইন ডে আসুক না কেন বাঙালি জীবনে সরস্বতী পুজোটাই আসলে চালু, শুরু, আরম্ভের দিন। তাই আরও একবার বলি চলুন, বিদ্যা দে মা। একটু আধটু বুদ্ধিও। সেই বুদ্ধিশুদ্ধি নিয়ে যেন খানিক রঙ (অবশ্যই প্রেমের) জমাতে পারি!

আরও পড়ুনঃ সরস্বতীকে স্বামী ত্যাগ করেছিলেন কেন জানেন? 

0/Post a Comment/Comments

নবীনতর পূর্বতন