স্টেডি সম্পর্কের মতো কালবৈশাখী আসে

রঙচটা প্রাচীরের দেওয়াল ঘেঁষে টুপ করে সন্ধ্যা নামে। হামাগুড়ি দিয়ে অন্ধকার ঢোকে আমাদের বেডরুমে। যৌনতায় মিশে থাকে জীবনের টানাপোড়েন। ক্লাসিফাইড বিজ্ঞাপনে ভরসা খুঁজতে থাকে মধ্যবিত্ত মন।  চৌকাঠের চিহ্ন রেখে যায় বদলে যাওয়া সময়, আর না বদলানো কিছু মানসিকতা দরজায় খিল দিয়ে দিনবদলের স্বপ্ন দেখে। প্রতি বুধবার সন্ধ্যায় এই আবছা আলো আঁধারিতে জমে থাক 'জীবনের ঘূর্ণিপাক'। লিখছেন প্রাণকৃষ্ণ ঘোষ

কালের নিয়মে বৈশাখ – জ্যৈষ্ঠ গ্রীষ্মকাল। গ্রীষ্মে তীব্র দাবদাহের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যা আসে তার নাম কালবৈশাখী। কালবৈশাখী আসলে একটা উন্মাদনার সবিশেষ বহিঃপ্রকাশ। প্রকৃতির উন্মাদনা। বসন্তের মোহময়ী রূপ আস্তে আস্তে পরিহার করে প্রকৃতি গ্রীষ্মের যে অবতারে নিজেকে অবতীর্ণ করার চেষ্টা করে তা কালবৈশাখী নামেই বেশ প্রসিদ্ধ। রূপ, রস, গন্ধের প্রকৃতি কে কালের নিয়ম বজায় রাখার জন্য বসন্তের মোহময়ী খোলস খুলে কালবৈশাখী নাম্নী পোশাক গায়ে জড়িয়ে ফেলতে হয় খুব তাড়াতাড়ি। ইলেকট্রিক পোলের তার ছিঁড়ে গিয়ে ইলেকট্রিসিটি অনির্দিষ্ট কালের জন্য অফ হয়ে যাওয়া, রাস্তায় গাছ পড়ে গিয়ে ফিরতি বাস আটকে যাওয়া, গুরুত্বপূর্ণ রেল ক্যানসেল বা ডিলেইড হয়ে যাওয়া, টিভি-ফ্রিজ নষ্ট হয়ে যাওয়া, অন্ধকারে এমার্জেন্সী লাইট হাতড়ে বেড়ানোর মধ্যে কালবৈশাখীর খারাপ দিকগুলো প্রকাশ্যে এলেও কালবৈশাখী মানে শুধুই খারাপ এমনটাও নয়। খারাপ পেরিয়ে কালবৈশাখী ভালোর আবাহন ও করে। তীব্র দাবদাহের পর কালবৈশাখীই পারে পরিবেশ হিমেল করতে, প্রেমিকার অভিমানী মুখকে এক লহমায় স্বাভাবিক করে তুলতে। ঝড় পেরিয়ে শান্তি খুঁজে পাওয়া প্রকৃতিরই নিয়ম। সেই নিয়মের প্রতিভূ হিসেবেই স্টেডি সম্পর্কের মতো  কালবৈশাখী আসে। তারপর খানিক তাণ্ডব চালিয়ে শান্তি হয়ে ফিরে যায়। রেখে যায় স্বস্তি। স্টেডি সম্পর্কের মতোই ।

0/Post a Comment/Comments

নবীনতর পূর্বতন