নকশী কাঁথায় ঢাকা জলপরীর লাশ

সময় বদলায়। বদলাবেই। নিয়নের আলো ফিকে হয়ে এলইডি'র উজ্জলতায়। স্মার্টফোন মাপে রক্তচাপ। মুহূর্তগুলো বন্দি আজ আঙুলের ছোঁয়ায়। তবু ছুটির দিনে ক্লান্ত দুপুরে ভাতঘুম মন। শিরিষ গাছের দীর্ঘ ছায়া আড়মোড়া ভাঙে তপ্ত ছাদে। আর মন কেমন করা রবিবার দুপুরে মজে থাকে 'রোদ্দুরের কথকতা'। 

কলমে-দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়

দূর থেকে জলকন্যা দেখা ভালো। কিন্তু কাছে গেলেই অনন্ত চাহিদা আর খিদে। রূপোর রেনু দিয়ে তৈরি পোশাকে জরি বসানো ফুল নিমেষে উধাও হয়ে যায়। নিত্য ব্যবহারে ক্লিন্ন সংসার পেড়ে ফেলে আমাদের। ছবির মতো সাজানো ঘরবাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়ে ঘেন্না, রাগ, পারস্পরিক দোষারোপ, দায়িত্ব, পাওয়া না পাওয়ার মতো গুরুতর লবজ আর হিংসা। কুকুরের ঝগড়া পাড়া মাত করে। পরস্পরকে ফালাফালা করলাম রোজ। অর্থাৎ বর্তমান অতীত হয়ে গেল। কিন্তু ছাড়তে না পেরে বহন করে চললাম প্রেমের শব নকশী চাদরে ঢেকে। যেভাবে কুমীর নিয়ে যায় অতলে। তখন আমি স্বভাবতই নিষ্ঠুর। হিংস্র। ভেঙে ফেলবো সব। পুড়িয়ে দেব সব। এই করে সমাজ সংসার সন্তান সবার কাছ থেকে সরে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে জনমানব হীন  আমরা সময় পেলাম পরস্পরের মুখোমুখি বসার। তখন অবশিষ্ট বলতে প্রাণটুকু। তোমার প্রতি হিংসা আমাদের শেষ করে দিয়েছে। কারোর ভালো তুমি দেখতে পারো না? কেন ঢুকিয়ে দাও ভালোবাসার মধ্যে এত সন্দেহ,  কলহ আর বিষ? কেন অগ্নি শুদ্ধ করতে চাও। কেন এক নিপাট নির্ভার সহজ সুন্দর সুগন্ধী সুবাতাস সব প্রাণে বইয়ে দাও না?  বুঝি। তাই এত দামী হয়ে যায় সম্পর্ক। ভালোবাসার মতো বায়বীয় বাস্তবতা গায়ে মেখে মহাকালের পাযের কাছে শুয়ে থাকি। ঘুমোই না, জেগে থাকি। যদি কোনদিন সে আমাকে না দেখে চলে। আমার ভেতরে গভীর অসুখ। আমার বাইরে খাওয়া বারণ। তবু দেখতে পাই আধো ঘুমে আধো জাগরণে কোথাও জলপ্রপাতের শব্দ। তুমি দেখো, এই পৃথিবী আবার জাগবে। শুধু ছাই নয়,  ভিতরে নিশ্চয়ই প্রাণ পাবে। তখন আমি হয়ে উঠবো আমারই উদ্ভিদ। অন্যরা চিনতে না পারলে তুমি দেখিয়ে দিও আমার শাখায় শাখায় ফুটে থাকা রক্ত করবীকে।।

0/Post a Comment/Comments

নবীনতর পূর্বতন