রোদ্দুরের কথকথা- দুই ডিঙায় দক্ষিণরায় বনবিবি আর মাঝে নিশিরডাক

সময় বদলায়। বদলাবেই। নিয়নের আলো ফিকে হয়ে এলইডি'র উজ্জলতায়। স্মার্টফোন মাপে রক্তচাপ। মুহূর্তগুলো বন্দি আজ আঙুলের ছোঁয়ায়। তবু ছুটির দিনে ক্লান্ত দুপুরে ভাতঘুম মন। শিরিষ গাছের দীর্ঘ ছায়া আড়মোড়া ভাঙে তপ্ত ছাদে। আর মন কেমন করা রবিবার দুপুরে মজে থাকে 'রোদ্দুরের কথকতা'। 

কলমে-দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়

রাজা, তুমি চিরকাল জালের আড়ালে লুকিয়ে থাকবে? আর আমি অনন্তকাল জন্ম জন্মান্তর ধরে আগুনে পাখির মতো তোমার প্রবল প্রতাপ, ভয় আর লুকনো অশরীরীর সঙ্গে লড়াই করে যাবো? আর কত রঞ্জনদের মৃতদেহ পেরিয়ে পেরিয়ে তোমার জালের বন্ধ দরজায় ধাক্কা মারতে মারতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ব। নিজের মৃত্যুর পরোয়া করি না। তা তুমি জানো। কিন্তু নন্দিনীরা কি হেরে যায় কখনও?  হারে না হারিয়ে দেয়। 
চিরকাল রাজাকে, সমাজকে, রক্তচক্ষু, বিধিনিষেধের বেড়াকে। তারপর একদিন ছোঁ মেরে নিয়ে যাব ঠিক আমার নিজের মানুষকে । তোমাকে ও সঙ্গে নিয়ে যাব ধোঁয়াশার মতো ।জীবনের না মেলানো অঙ্কের মতো। পাহাড় পর্বত সমুদ্র ডিঙিয়ে তোমাকে নিয়ে যাব কঠিন কঠোর রুক্ষ উপল খন্ডের উপর দিয়ে। নাকি তুমি ও আমার মনকে নিয়ে যাবে দ্বিধার বালিতে।
রাজা,  বলো আমাদের কারোরই পরিত্রাণ নেই। কোথায় পালাবো। আমি যেমন প্রেম  নিয়ে যাব,  তেমনি তুমি ও সঙ্গে নিয়ে যাবে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব আর আশঙ্কা। তোমার মনে পড়ে?  কোথায়? 
মনে করো সেই নিরুদ্দেশ মেঘ। সমুদ্রের ফেনা যেন মুক্তোর  ঝকমক। নোনা হাওয়ার ঝড়। গলে পড়া সোনার মতো জ্যোৎস্না। পাগল হাওয়ারা কত কী যে বলে গেল। গাছের পাতায় অলৌকিক ভাষায় কথা বলে কারা? হৃদয়ে হৃদয়ে কী মিলমিশ। তীর ছাপিয়ে যাওয়া ভালোবাসা কতদিন পেরিয়ে যায়। শ্রাবণ মাঘ চৈত্র পেরিয়ে যায়। তারপর?  তার আর পর নেই। 
গোটা সুন্দরবন উথাল পাথাল  করে বনবিবি বেরিয়ে আসেন। তিনিই অপর পারে হয়ে যান দক্ষিণ রায়। সেই শৌর্য মিশ্রিত সুন্দরের সামনে নিজেকে ঘাস ফড়িং মনে হয়। সেই তিনি আমায় ইশারায় ডাকলেন। আমি নামতে থাকলাম। হাঁটু জল বুকজল ডুব জল। এ মহাসমুদ্রে সাঁতার জানা না জানার মধ্যে কোনও ফারাক নেই। সেই খিলখিল হাসি রিনরিন কন্ঠ স্বর। না মরেই বা আমার কাজ কী?  আমি নিশি পাওয়া না  বালিকা। আমার সমস্ত অস্থি মজ্জা অস্তিত্ব না খেয়ে তোমার শান্তি নেই। সেই জলকন্যা শুধু ভাগ্যবান মাঝিরা দেখতে পায়।


0/Post a Comment/Comments

নবীনতর পূর্বতন