ডেইলি প্যাসেঞ্জার-আড্ডা, ঝালমুড়ি আর সিট ভাগাভাগি

রঙচটা প্রাচীরের দেওয়াল ঘেঁষে টুপ করে সন্ধ্যা নামে। হামাগুড়ি দিয়ে অন্ধকার ঢোকে আমাদের বেডরুমে। যৌনতায় মিশে থাকে জীবনের টানাপোড়েন। ক্লাসিফাইড বিজ্ঞাপনে ভরসা খুঁজতে থাকে মধ্যবিত্ত মন।  চৌকাঠের চিহ্ন রেখে যায় বদলে যাওয়া সময়, আর না বদলানো কিছু মানসিকতা দরজায় খিল দিয়ে দিনবদলের স্বপ্ন দেখে। প্রতি বুধবার সন্ধ্যায় এই আবছা আলো আঁধারিতে জমে থাক 'জীবনের ঘূর্ণিপাক'। লিখছেন প্রাণকৃষ্ণ ঘোষ

“বন্ধু তোমায় এ গান শোনাবো বিকেল বেলায়”- বিকেল বেলায় বিভিন্ন বয়সের বন্ধুরা একত্রিত হয় যেসব জায়গায় তার মধ্যে অন্যতম হল রেলওয়ে স্টেশন। হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন, ডেইলি প্যাসেঞ্জারদের কথায় বলছি। সারাদিনের ক্লান্তি, অফিসিয়াল হ্যাজার্ডস, বউয়ের  এসএমএস দেখে ধরে ধরে সমস্ত জিনিস কেনার ঝক্কি পেরিয়ে; সরকারি- বেসরকারি সংস্থার কর্মী, ক্লার্ক – অফিসার, টিচার – প্রফেসর, ব্যবসায়ী-কারখানার শ্রমিক প্রত্যেকেই একসঙ্গে বাড়ি ফেরার জন্য জমা হন রেলওয়ে স্টেশনে বা বাসস্ট্যান্ডে। এঁদেরই পোশাকি নাম ডেইলি প্যাসেঞ্জার। 
এঁরা একে অপরের পিছনে লাগতে ভালোবাসেন, ভালোবাসেন একে অপরের পয়সায় চা-সিগারেট – ঝালমুড়ি কিনতে। এই একসঙ্গে যাওয়ার সময়টুকুতে এঁরা পুরো রাজার মেজাজে থাকেন। এই জায়গায় কোনো সিনিয়র – জুনিয়র নেই, ক্লার্ক – অফিসার নেই, শ্রমিক – সুপারভাইজার নেই, ব্যবসায়ী – চাকুরিজীবি নেই। এঁদের পরিচয় একটাই। ডেইলি প্যাসেঞ্জার। 
ছেলের বয়সী কাউকে এখানে অবলীলায় ভাই বলা যায়। বাবার বয়সী কারো সঙ্গে এখানে অবলীলায় হালকা খিস্তি মারা যায়। পুরুষ – মহিলা নির্বিশেষে এখানে অর্ধেক রাস্তা যাওয়ার আগে বা পরে অবলীলায় সিট ভাগাভাগি করে বসা যায়। ডেইলি প্যাসেঞ্জার এমন এক সম্পর্ক যেখানে কোনো ইগো চলে না। সারাদিনের ইগোইজমকে সরিয়ে রেখে যাতায়াতের ঐ সময়টুকুতে আসলে প্রাণ খুলে বাঁচা যায়। 
একজন কোনোদিন অ্যাবসেন্ট থাকলেই সবাই মিলে ফোন। হোক না খিল্লি, হোক না খিস্তি। খোঁজ নেওয়াটা তো জেনুইন। মিস করাটা তো আর আর্টিফিসিয়াল নয়। কন্টকময় জীবনের কমিক রিলিফ হিসেবে বেঁচে থাক ডেইলি প্যাসেঞ্জারের জীবন। ট্রান্সফার হয়ে যাওয়ার পরও রাস্তাঘাটে দেখা হলে শর্তহীন ভাবে আপনার শুভকামনা করবেন যাঁরা তাঁদের মধ্যে আর কেউ থাকুক না থাকুক, আপনার কোনও এক সময়ের কোনও এক রুটের ডেইলি প্যাসেঞ্জার থাকবেই।

আরও পড়ুনঃ  বেঁচে থাক নোটবুক- হোক না সে ডিজিটাল

বেছে নিন প্রতিদিন ব্যবহারের টেকসই ব্যাগ, আর পেয়ে যান আকর্ষণীয় ছাড়

0/Post a Comment/Comments

নবীনতর পূর্বতন