চৈত্রসেলের হাঁকডাক, আর কালবৈশাখী মাখা বিকেল

রঙচটা প্রাচীরের দেওয়াল ঘেঁষে টুপ করে সন্ধ্যা নামে। হামাগুড়ি দিয়ে অন্ধকার ঢোকে আমাদের বেডরুমে। যৌনতায় মিশে থাকে জীবনের টানাপোড়েন। ক্লাসিফাইড বিজ্ঞাপনে ভরসা খুঁজতে থাকে মধ্যবিত্ত মন।  চৌকাঠের চিহ্ন রেখে যায় বদলে যাওয়া সময়আর না বদলানো কিছু মানসিকতা দরজায় খিল দিয়ে দিনবদলের স্বপ্ন দেখে। প্রতি বুধবার সন্ধ্যায় এই আবছা আলো আঁধারিতে জমে থাক 'জীবনের ঘূর্ণিপাক' লিখছেন প্রাণকৃষ্ণ ঘোষ

অফিস থেকে বাড়ি ফিরছি। পেছনে তাড়া দিচ্ছে কালবৈশাখী। বাইকের অ্যাক্সেলারেটর দাবাতে শুরু করেছি সবেমাত্র। মোড়ের মাথায় এসেই থমকে গেলাম প্রবল জনস্রোতে। চৈত্রসেল চলছে। 
চৈত্র মানে বাংলা বছরের শেষ। চৈত্র মানে বিক্রির শুরু। সেলের শুরু। আসলে এটা একটা অনুভব, যা আপনাকে পৌঁছে দেবে সেই মেন্টাল স্টেটে যেখানে দাঁড়িয়ে আপনি ভাববেন ক’টা শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, বেডকভার কিনে না রাখতে পারলে আপনি লুজার। মধ্যবিত্তের তো আর ক্রেডিট কার্ডময় মল কালচার নেই। তাই চৈত্রসেল আছে। 
অবিশ্যি সুবিশাল শপিং মলের ফাস্ট মিউজিক শুনতে শুনতে, পিছলে যাওয়া টাইলস- এর ওপর দাঁড়িয়ে, ট্রলি হাতে ট্রায়াল রুম থেকে বউয়ের ফিরে আসার অপেক্ষার চেয়ে ঢের ভালো এই মধ্যবিত্ত আবেগ। দোকানদারদের হাঁকডাক, পথচলতি মানুষের আওয়াজ বিকেলের শহরকে করে তোলে সহজাত। কৃত্তিমতা পেরিয়ে এক ঝটকায় নিষ্প্রাণ শহরটা জেগে ওঠে। জেগে ওঠে বলেই, “ চৈত্রসেল আসলে ফাঁদ। সেলের সময় বিক্রির জন্য আলাদাভাবে বাজে কোয়ালিটির মাল তৈরি করা হয়”-এইসব সাবধান বাণী পেরিয়েও আপনি ভিড় ঠেলে ঘামতে ঘামতে জিনিসের দরদাম করেন।
মাগ্গিগণ্ডার বাজারে সারাবছরের আটপৌরে জিনিসগুলো আর বিয়ে বাড়িতে দেওয়ার ক’টা শাড়ি যদি না কিনে রাখতে পারেন তাহলে আপনি কিসের মধ্যবিত্ত মশাই! তার চেয়ে গুলি মারুন সতর্কতা। বউকে সঙ্গে নিয়ে শিগগির ঢুঁ মারুন চৈত্রসেলে। দর করুন। কিনে ফেলুন। আর মাত্র কয়েকটা দিন। ফের বছর খানেকের অপেক্ষা। কিনতে কিনতে উচ্চবিত্তের আর্টিফিসিয়ালিটি পেরিয়ে সহজাত মধ্যবিত্ত হয়ে উঠুন। চৈত্রসেলের স্বভাবগত উন্মাদনার অংশিদার হতে চাইলে ”আর বিলম্ব নয়”। 

0/Post a Comment/Comments

নবীনতর পূর্বতন