সময় বদলায়। বদলাবেই। নিয়নের আলো ফিকে হয়ে এলইডি'র উজ্জলতায়। স্মার্টফোন মাপে রক্তচাপ। মুহূর্তগুলো বন্দি আজ আঙুলের ছোঁয়ায়। তবু ছুটির দিনে ক্লান্ত দুপুরে ভাতঘুম মন। শিরিষ গাছের দীর্ঘ ছায়া আড়মোড়া ভাঙে তপ্ত ছাদে। আর মন কেমন করা রবিবার দুপুরে মজে থাকে 'রোদ্দুরের কথকতা'।
কলমে-দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়।
আসলে আমরা সবাই নিজের নিজের সুখস্মৃতিতে বিভোর থাকতে ভালবাসি। ‘ফুরোয় না তার কিছুই ফুরোয় না নটে গাছটি বুড়িয়ে ওঠে কিন্তু মুড়োয় না’। আমার রন্ধ্রের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বাসা বেঁধে আছে। নিজেকে জিগ্যেস করি পরিশ্রম আর কষ্টের দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ পরিক্রমার মাঝে শর্টকার্ট রাস্তা খোঁজা কি অন্যায়? শেষে সত্যিই কি কোনো ফুলবিছানো অমরাবতী অপেক্ষা করে আছে? নাকি সবটাই অলীক? তাহলে কোন সাহসে আর স্পর্ধায় আমরা আশা করি সন্ততিরা তাদের বড় হওয়ার পথে সততা নিষ্ঠা আর অধ্যবসায় ভর করে জীবনের নির্মাণ করবে। প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়লেও সে হাল ছাড়বে না। সে কি বিশ্বাস করবে আমাদের সব চেয়ে ধারালো তরবারির নাম জ্ঞান। আমাদের একমাত্র লক্ষ্যের নাম মোক্ষ। তারা কি বন্ধুতা আর মানবতায় অগাধ আস্থাশীল হবে? বাংলা ভাষা সাহিত্যের কোলে লালিত হয়ে বিশ্বজনীনতার অসীম আকাশে স্বাভাবিক বিচরণ করবে? নাকি ঘাড় মুখ গুঁজে কোনো কল্পিত জগতের খোয়াবে খুইয়ে ফেলবে অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ। সহজাত কৌতুকে আর বেদনায় যদি জীবন স্নাত নাই হল তবে হাতে রইল পেনসিল। স্বচ্ছ সহজ ভালবাসায় মোড়া অনাবিল হৃদয় যদি না পেলাম তাহলে বৃথা গেল এ জীবন।
অনেক জন্ম আগে একটা জীবন পেয়েছিলাম কল্পমায়ায় দীক্ষা ছায়ায়। অনন্ত সেই বটতরুমূলে গেয়েছিলাম। কন্ঠ পুরে পাখির সুরে উদাস হাওয়ায় বড় হবার দারুণ লোভে কাগজ নৌকা ভাসিয়েছিলাম। তারপর সেই পথের টানে পথের পানে কত জন্ম এল গেল কে তা জানে। কে তা মানে। তা না মানুক। জানে আমার হারিয়ে ফেলা ঝিনুক। বইএর ফাঁকে লুকিয়ে রাখা চিঠি আর হিজিবিজি কাটাকুটি খাতা। ছোট্ট সে গ্রাম। সবাই তখন অভিভাবক, সবাই তখন ছাতা। ছাঁচে ঢালা জোব্বাপরা রবীন্দ্রনাথ তাকিয়ে থাকেন আলমারির কাচের ভেতর থেকে। সঙ্গে চলে প্রশ্রয় আর ভালবাসার অদৃশ্য হাত। সবই গেল। নাকি ফিরেও এল। ছোট্ট ছেলে আমারই মতন রকমসকম। তুচ্ছ যত টুকরোটাকরা কাটুমকুটুম কুড়িয়ে পেলে সারাদিনমান কাটিয়ে দেবে হেসে ও খেলে। তারপর সেই পথের টানে পথের পানে কত জন্ম এল গেল কে তা জানে। কে তা মানে। তবু বুঝি দোল দেয় প্রাণে। এমনি করেই ছুঁয়ে থাকা এমনি করেই জুড়ে থাকা। এমনি করেই চেয়ে থাকা তোমার সঙ্গে তোমার পানে।।