রঙচটা প্রাচীরের দেওয়াল ঘেঁষে টুপ করে সন্ধ্যা নামে। হামাগুড়ি দিয়ে অন্ধকারে ঢোকে আমাদের বেডরুমে। যৌনতায় মিশে থাকে জীবনের টানাপোড়েন। ক্লাসিফাইড বিজ্ঞাপনে ভরসা খুঁজতে থাকে মধ্যবিত্ত মন। চৌকাঠের চিহ্ন রেখে যায় বদলে যাওয়া সময়, আর না বদলানো কিছু মানসিকতা দরজায় খিল দিয়ে দিনবদলের স্বপ্ন দেখে। প্রতি বুধবার সন্ধ্যায় এই আবছা আলো আঁধারিতে জমে থাক 'জীবনের ঘূর্ণিপাক'। লিখছেন প্রাণকৃষ্ণ ঘোষ।
মধ্যবিত্তের স্নানঘরে বাথটব থাকে না, মার্বেলে ছোপ থাকে। মধ্যবিত্তের স্নানঘরে গিজার থাকে না, হরেককিশিমের শ্যাম্পু থাকে। একটা কাপড়কাচা সাবানকে মাঝ বরাবর কাটা অবস্থায় একটা ঢাকা না থাকা সাবানকেসের মধ্যে আবিষ্কার করা যায় যে জায়গায় সেটা মধ্যবিত্তের স্নানঘর। ওখানে ফেস ওয়াশের টিউবের মুখটা কেটে বড় করা হয়, ওখানে শ্যাম্পুর বোতলে জল ভরা থাকে। জল ভর্তি শ্যাম্পুর বোতলটা ঝাঁকিয়ে নেওয়ার পর যে তরলটা পাওয়া যায় সেটা দিয়েই দু-তিনদিনের শ্যাম্পু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়। কোণের দিকে পড়ে থাকা মুড়ো ঝাঁটাটার কাঠিগুলো ভাঙতে ভাঙতে কখন যে ছোপদুরস্ত মার্বেলের মেঝে পেরিয়ে আউটলেট পাইপ দিয়ে সোজা ড্রেইনে গিয়ে মিশে যায়, বোঝা যায় না একদম। রঙচটা দেওয়াল আর লম্বা লম্বা ঝুলের মেলবন্ধনে টিকটিকির খসখস আওয়াজ অবশ্য বুঝিয়ে দেয় আমরা মধ্যবিত্তের স্নানঘরে রয়েছি।
মধ্যবিত্তের স্নানঘরে আরাম করে বিড়ি ধরানো যায়, সুতীব্র সুখটানের পর জানালার অর্ধেকটা কাঁচ ফাঁক করে বিড়ির কাউন্টারকে সোজা ড্রেইনে চালান করা যায় । ছোপদুরস্ত মেঝের মধ্যে চটা ওঠা মার্বেলের তলায় দাঁড়িয়ে মধ্যবিত্তের স্নানঘরে হালকা শাওয়ার নিতে নিতে পাশের বাড়ির বৌদির ক্লিভেজের অবয়ব ফুটে ওঠে। মধ্যবিত্তের স্নানঘরে আর্টিফিসিয়ালিটি থাকে না, আবেগ থাকে। মধ্যবিত্তের স্নানঘরে বন্যতা থাকে না, স্বপ্ন বোনা থাকে।