জলবালা না দুধবালা?

রঙচটা প্রাচীরের দেওয়াল ঘেঁষে টুপ করে সন্ধ্যা নামে। হামাগুড়ি দিয়ে অন্ধকার ঢোকে আমাদের বেডরুমে। যৌনতায় মিশে থাকে জীবনের টানাপোড়েন। ক্লাসিফাইড বিজ্ঞাপনে ভরসা খুঁজতে থাকে মধ্যবিত্ত মন।  চৌকাঠের চিহ্ন রেখে যায় বদলে যাওয়া সময়, আর না বদলানো কিছু মানসিকতা দরজায় খিল দিয়ে দিনবদলের স্বপ্ন দেখে। প্রতি বুধবার সন্ধ্যায় এই আবছা আলো আঁধারিতে জমে থাক 'জীবনের ঘূর্ণিপাক'। লিখছেন প্রাণকৃষ্ণ ঘোষ

বর্তমান সময়ে আইসক্রিমকে কেন্দ্র করে যত বড় বিপ্লবই ঘটে যাক না কেন, আইসক্রিম শুনলেই পিছিয়ে যেতে মোটামুটি বছর কুড়ি আগে। শৈশব পেরিয়ে বয়ঃসন্ধির দিকে পা বাড়াচ্ছি সবে। দাদু বা ঠাকুমার কাছ থেকে যেদিন একান্তই ম্যানেজ করা যেত না সেদিন নজর পড়তো মায়ের ছেড়ে রাখা কাপড়ের ওপর চটপট মা এর কাপড়ের খুঁটে চলতো চার আনা, আট আনার খোঁজ। সেখানেও ব্যর্থ হলে সরাসরি মায়ের কাছে আবদার। হাতে চার আনা বা আট আনা এলেই কান খাড়া করে অপেক্ষা করা। কখন আসবে সে! সেই প্যাঁক প্যাঁক আওয়াজ কানে ঢোকামাত্রই একছুটে চাঁদের পাহাড় ইয়ে মানে ওভার টু আইসক্রিমবালা। চার আনা হাতে থাকলে জলবালা অর্ডার করা আর আট আনা হাতে থাকলে সোজাসুজি দুধবালা চাওয়া, মেজাজের সঙ্গে। মাঝে মধ্যে ইস্কুল কামাই করে আলু মাঠে যাওয়া। না আলু তোলা তদারকি করবার জন্য নয়, আসলে মাঠের আলু দিয়ে আইসক্রিম খাওয়ার জন্য। এখন মোড়ে মোড়ে আইসক্রিম পার্লার, হাজার একটা আইসক্রিমের গাড়ি, নানাবিধ ফ্লেভার আর নানারকম ভ্যারাইটি অ্যাভেলেবল থাকলেও সেই জমির আলে দাঁড় করিয়ে রাখা সাইকেলের পিছনের ওই ছোট্ট বাক্সটাকে আজও ভোলা যায় না। কোন, ভ্যানিলা, ফালুদা যাই আসুক না কেন আইসক্রিম মানে আজও হাতে চার আনা থাকলে জলবালা আর হাতে আট আনা থাকলে দুধবালা। আইসক্রিম মানেই ভরাট নস্টালজিয়া উন্মাদনা

0/Post a Comment/Comments

নবীনতর পূর্বতন