অদ্রিজা মণ্ডল: নারী দিবসের কথা উঠলেই এখন উঠে আসে একটা বিতর্ক- এখনো এই বিশেষ দিনটা পালনের প্রয়োজনীয়তা আদৌ আছে কি না। অনেক নারীই আবার বলেন, বছরের এই একটা দিনই কি শুধু মেয়েদের জন্য! যাবতীয় বিতর্ক দূরে সরিয়ে ইতিহাসের পাতা থেকে হাঁটতে শুরু করে সংক্ষিপ্ত আত্মসমীক্ষা করা যাক…
‘নারী হয়ে কেউ জন্মায় না, বরং নারী হয়ে ওঠে’- লিখেছিলেন সিমোন দ্য বোভোয়া। সত্যিই তো, মেয়ে একটু বড় হতেই আজও অনেক পরিবারে তাকে বেঁধে বেঁধে রাখার একটা প্রয়াস শুরু হয়ে যায়। তবু সুপ্রাচীন কাল থেকেই অবদমনের অনেক চেষ্টাই ব্যর্থ করে দিয়েছে হার-না-মানা মেয়ে, মহিলা আর মায়েরা। সেই ১৯১০ সাল থেকে যে দিনটা ‘নারী দিবস’ হিসাবে পালিত হয়ে আসছে, আজও তার তাৎপর্য ফুরিয়ে যায়নি মোটেই। আজও মদ্যপ স্বামীর হাতে মার খাওয়া নারীর দিন গুজরান হয় অস্তিত্বের সংগ্রাম করতে করতে। আজও অনেক শিক্ষিত সচ্ছল পরিবারে নারীর ইচ্ছা-শখ-স্বাধীনতাকে শেষ করে দেওয়া হয় তিলে তিলে। নারীকে আপন ভাগ্য জয় করার অধিকার ভগবান দিয়েছেন অবশ্যই; তবু এখনো ঘরে-বাইরে সত্যিকারের সমানাধিকার, সমমর্যাদা আর সমান পারিশ্রমিক অর্জনে মেয়েদের লড়াই করতে হয় অনেক বেশি। সম্বল বলতে অদম্য জেদ আর প্রকৃতি-প্রদত্ত প্রতিভা।
১৯৩৬-এ রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, নারীর স্বভাবের মধ্যে রয়েছে সংসারকে শান্তি ও আনন্দ দেবার এক সহজাত প্রবৃত্তি। আজ এটাও অনস্বীকার্য যে, কর্মক্ষেত্রে অনেক মহিলাই গুরুদায়িত্ব পালন করে চলেছেন দক্ষতা ও নিষ্ঠা, সর্বোপরি ভালোবাসার সঙ্গে। একবিংশ শতাব্দীতে আমাদের আন্তরিক কামনা তো এটাই- আরও অনেক অরুন্ধতী (ভট্টাচার্য) উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে সগৌরবে কাজ করে যান, আরও অনেক হিনা জয়সওয়াল আকাশে ওড়াক বিজয়কেতন। আর ২০১৯-এর ৮ই মার্চ আনুক এমন একটা সকাল- যেদিন থেকে আট থেকে আশির কোন নারীই আর একলা বাইরে বেরোনর আগে সম্ভ্রম হারানোর ভয় পাবে না। আর কোন ঘরেই অসম্মানিত হতে হবে না প্রতিদিন ত্যাগ স্বীকার করে আমাদের আগলে রাখা মায়েদের…