আজ মহাশিবরাত্রি। হিন্দুধর্মের সর্বোচ্চ আরাধ্য দেবতা ‘শিবের মহা রাত্রি’। ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশী তিথিতে আমরা মহাশিবরাত্রি পালন করি। অগণিত ভক্ত এই দিন শিবলিঙ্গে গঙ্গাজল, দুধ, বেলপাতা, ফুল দিয়ে পুজো করে থাকে। কিন্তু আপনি কি আপনার আরাধ্য এই দেবতার ব্যাপারে বিস্তারিত জানেন? না জানা থাকলে জেনে নিন।
১) অবিবাহিত মেয়েরা বলে, শিবের মতো স্বামী চাই। কিন্তু শিব কিসের দেবতা? আমরা জানি, কুবের অর্থের দেবতা। সরস্বতী বিদ্যার দেবী। তাহলে মহাদেব কিসের ঠাকুর? আসলে দেবাদিদেব হলেন জ্ঞাণের দেবতা। সরস্বতীর আরাধনা করি বিদ্যা-বুদ্ধির জন্য। কিন্তু জ্ঞাণী হতে গেলে আপনাকে শিবের উপাসক হতে হবে। তাই শিবের মতো স্বামীর প্রার্থনা মানে আপনি জ্ঞাণী স্বামী চাইছেন।
২) আজ আপনি শিবলিঙ্গে জল ঢালবেন। কিন্তু জলটা ঠিক কথায় ঢালছেন? মানে শিবের মাথায় নাকি সত্যিই পরমেশ্বরের লিঙ্গে? আসলে কোনটিই নয়। 'লিঙ্গ' শব্দের অর্থ হল 'বাস' মানে, বাসস্থান। অর্থাত্ শিবঠাকুর যেখানে বাস করেন বা বিরাজ করেন, সেটাই হল শিবলিঙ্গ'! তাহলে বুঝলেন তো, জলটা কোথায় ঢালছেন!
৩) শিবলিঙ্গের ব্যাপারটা না হয় পরিষ্কার হল। কিন্তু শিবলিঙ্গের নিচে গোল চাকতির মতো ওটা কী? ওটা হল পার্বতীর পিঠ। পুরাণ মতে, জ্ঞাণের বিকাশ হয় শক্তির পিঠের উপর। আর শক্তির উত্স আসলে পার্বতী-দুর্গা বা নারী। নারী শক্তির উপর ভিত্তি করেই জ্ঞান বিকশিত হয়। সত্যি এটাই।
৪) আজ তো গঙ্গাজল, দুধ, বেলপাতা, আকন্দ ফুল, ফল দিয়ে শিবের আরাধনা করবেন। ঠিক আছে। কিন্তু সঙ্গে কলকে ও গাঁজা কেন? শিবের নেশা-ভাঙের কারণ কী! মানুষ হোক বা দেবতা কিংবা শয়তান। সবাই রিপু ও ক্রোধ, এই দুই সমস্যায় জর্জরিত। আর কে না জানে রাগ মানই ধ্বংস। আসলে শিব জ্ঞাণী হলে কী হবে। তাঁর ক্রোধও অনেক বেশি। শিব রাগলে তো তাণ্ডব নৃত্য করেন। সব স্বামীদের শান্ত করতে পারেন স্ত্রীরা। কিন্তু পার্বতীকে দশের সেবা করতে হয়। তাই জ্ঞাণী শিব আরও একা হয়ে যান। তাই সময় কাটানোর জন্য ছাইপাস নেশার আশ্রয়। একটু শান্তি আর নিজের ক্রোধ এবং কামকে সামান্য সংযমী করার চেষ্টা।
৫) শিবরাত্রি কি শুধুই মেয়েদের ব্রত? না, মোটেই শুধু মেয়েদের পালনীয় ব্রত নয়। ছেলেরাও শিবরাত্রি করতে পারে। আসলে প্রথম শিবরাত্রি তো করেছিলেন এক জন পুরুষই! [শিবরাত্রি করছেন, কিন্তু জানেন কি শিবরাত্রির প্রচলন কিভাবে হয়?] অন্ধকার আর অজ্ঞতা দূর করার জন্য এই ব্রত পালিত হয়। হিন্দু মহাপুরাণ অনুসারে, এই রাতেই শিব সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়ের মহা তান্ডব নৃত্য করেছিলেন। আবার এইরাত্রেই শিব ও পার্বতীর বিবাহ হয়েছিল এবং শিব লিঙ্গ রূপে প্রকাশিত হয়েছিলেন। তাই এই ব্রত করলে জীবের পাপনাশ ও মুক্তি ঘটে।